Sunday, June 12, 2016

আধুনিক জীববিজ্ঞানের জনক অ্যারিস্টটল (Aristotle)

Aristotle

আধুনিক জীববিজ্ঞানের জনক অ্যারিস্টটল (Aristotle)। বিশ্ববিজয়ী আলেকজান্ডার দুঃখ করে বলেছিলেন জয় করবার জন্য পৃথিবীর আর কোন দেশ বাকি রইল না। তাঁর শিক্ষক মহাপন্ডিত অ্যারিস্টটল সম্বন্ধেও একই কথা প্রযোজ্য। জ্ঞানের এমন কোন দিক নেই তিনি তাঁর পথপ্রদর্শক নন। তাঁর Politics  গ্রন্থটি আধুনিক রাষ্ট্রনীতির সূচনা করে। তিনি ছিলেন বহু দার্শনিক তত্ত্বের প্রবক্তা। 
৩৮৪ খ্রীস্ট পূর্বে থ্রেসের অন্তর্গত স্তাজেইরা শহরে অ্যারিস্টটল জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা ছিলেন চিকিৎসক। নাম নিকোমাকাস। 
শৈশবে গৃহেই পড়াশুনা করেন অ্যারিস্টটল। মাত্র ১৭ বছর বয়সে পিতামাতাকে হারিয়ে গৃহত্যাগ করেন। ঘুরতে ঘুরতে তিনি এথেন্সে এসে উপস্থিত হন। সেই সময় এথেন্স ছিল শিক্ষার কেন্দ্র ।
সক্রেটিসের শিষ্য প্লেটো গড়ে তুলেছেন নতুন একাডেমি। সেখানে ভর্তি হন অ্যারিস্টটল। অল্প কিছুুদিনের মধ্যে তিনি নিজের যোগ্যতায় হয়ে উঠলেন একাডেমির সেরা ছাত্র। প্লেটোও তাঁর অসাধারণ বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। 
শিক্ষাদান ছাড়াও নানান বিষয়ে গবেষণার কাজ করতেন অ্যারিস্টটল। তর্কবিদ্যা, অধিবিদ্যা, প্রকৃতি বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, নীতিশাস্ত্র ‍ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা করেন। অল্পদিনের মধ্যেই তাঁর গভীর জ্ঞান ও অসাধারণ পান্ডিত্যের কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ম্যাসিডনের রাজা ফিলিপেরও অজ্ঞাত ছিল না। 
পুত্র আলেকজান্ডারের জন্ম সময়েই তাঁর শিক্ষার ভার অর্পণ করেন অ্যারিস্টটলের উপর। তখন অ্যারিস্টটল ২৮ বছরের যুবক। 
আলেকজান্ডার যখন ১৩ বছরের কিশোর, রাজা ফিলিপের আমন্ত্রণে অ্যারিস্টটল এসে তাঁর শিক্ষার ভার গ্রহণ করলেন। শ্রেষ্ঠগুরুর ‍দিগ্বিজয়ী ছাত্র। বহু প্রাচীন ঐতিহাসিকের ধারণা অ্যারিস্টটলের শিক্ষা উপদেশই আলেকজান্ডারের অদম্য মনোবল লৌহকঠিন দৃঢ় চরিত্র গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। 

প্রকৃতপক্ষে একজনের ছিল সমগ্র পৃথিবীকে জয় করে তার উপর প্রভূত্ব করবার প্রবল ইচ্ছা। অন্য জনের ছিল জ্ঞানের নতুন নতুন জগৎ আবিস্কার করে মানুষের জন্য তাকে চালিত করার ইচ্ছা। 
অ্যারিস্টটলের প্রতি রাজা ফিলিপেরও ছিল গভীর শ্রদ্ধা। শুধু পু্ত্রের শিক্ষক হিসাবে নয়, যথার্থ জ্ঞানী হিসাবেও তাঁকে সম্মান করতেন। অ্যারিস্টটলের জন্মস্থান স্তাজেইরা কিছু দুর্বৃত্তের হাতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। সেখানকার বহুমানুষ বন্দী জীবন যাপন করছিল। রাজা ফিলিপ অ্যারিস্টটলের ইচ্ছায় শত্রূসেনার হাত থেকে শুধু ্স্তাজেইরা উদ্ধার করেননি, ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে শহরকে নতুন করে গড়ে তুলেছেন। 
অ্যারিস্টটল একদিকে ছিলেন মহাজ্ঞানী, অন্যদিকে ছিলেন সার্থক শিক্ষক। তাই গুরুর প্রতি আলেকজান্ডারের ছিল অসীম শ্রদ্ধা। তিনি বলতেন, পিতার কাছ থেকে পেয়েছি আমার এই জীবন আর গুরুর কাছ থেকে শিক্ষালাভ করেছি কিভাবে এ জীবনকে সার্থক করা যায় তাঁর জ্ঞান। যখন অ্যারিস্টটল জীবন বিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণার কাজ করছিলেন, আলেকজান্ডার তাঁর সাহায্যের জন্য বহু মানুষকে নিযুক্ত করেছিলেন, যাদের কাজ ছিল বিভিন্ন ধরণের মাছ, পাখি, জীবজন্তুুদের জীবন পর্যবেক্ষণ করা, তার বিবরণ সংগ্রহ করে পাঠানো। দেশ বিদেশের যেখানেই কোন পুঁথি পান্ডূলিপি পাওয়া যেত, আলেকজান্ডার যে কোন মূল্যে সেই পুঁথি পান্ডূলিপি সংগ্রহ করে গুরুর হাতে তুলে দিতেন। 
যখন আলেকজান্ডার এশিয়া জয়ের নেশায় সৈন্য বাহিনী নিয়ে বের হন, তখন অ্যারিস্টটল ফিরে গেলেন এথেন্সে। সে সময় এথেন্স ছিল শিল্প সংস্কৃতি শিক্ষার পীঠস্থান।  এখানেই স্কুল স্থাপন করলেন অ্যারিস্টটল। তখন তাঁর বয়স ৫০ বছর। স্কুলের নাম রাখা হল লাইসিয়াম। কারণ কাছেই ছিল গ্রীক দেবতা লাইসিয়ামের মন্দির। 
৩২৩ খ্রীস্ট পূর্বে আলেকজান্ডারের আকস্মিক মৃত্যু হল। এত দিন বীর ছাত্রের ছত্রছায়ায় যে জীবন যাপন করতেন তাতে বিপর্যয় নেমে এল। কয়েকজন অনুগত ছাত্রের কাছ থেকে সংবাদ পেলেন তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সক্রেটিসের অন্তিম পরিণতির কথা অজানা ছিল না অ্যারিস্টটলের। তাই গোপনে এথেন্স ত্যাগ করে ইউরিয়া দ্বীপে গিয়ে আশ্রয় নিলেন। কিন্তু এই স্বেচ্ছানির্বাসনের যন্ত্রণা বেশিদিন ভোগ করতে হয়নি অ্যারিস্টটলকে। ৩২২ খ্রীস্টপূর্ব তাঁর মৃত্যু হল।

No comments:

Post a Comment

Please Comment here

-->

Popular Posts

-->
-->