Sunday, June 19, 2016

বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে জনশক্তি রপ্তানির (Manpower Exportation) ইতিবাচক প্রভাব

জনশক্তি রপ্তানি বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় একটি ক্ষেত্র। প্রতিবছরই বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি হচ্ছে। প্রতিবছরই জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে বড় একটি অংশ রেমিট্যান্স যোগ হচ্ছে। দক্ষ অর্ধদক্ষসহ বিভিন্ন শ্রেণীর শ্রমিক বিদেশে কাজ করতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের জনশক্তি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে অধিক হারে রেমিট্যান্স  আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। অাট মিলিয়নেরও বেশি বাংলাদেশী শ্রমিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বৃহত্তর উৎস।
বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে জনশক্তি রপ্তানি শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। প্রথম বছর সৌদি আরব, কুয়েত, ইউনাইটেড আরব আমিরাত, কাতার, ‍ইরাক, লিবিয়া, বাহরাইন, ওমানসহ অন্যান্য কয়েকটি দেশে জনশক্তি রপ্তানি হয়।
অভিবাসী জনশক্তির খাত সমূহ:
♦ টেকনিক্যাল ম্যানপাওয়ার: বিদেশে শ্রমিক রপ্তানির ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল ম্যানপাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছরই প্রচুর পরিমাণ টেকনিক্যাল জনশক্তি রপ্তানি হচ্ছে। বিদেশে গিয়ে এসব শ্রমিকরা বিভিন্ন টেকনিক্যাল কাজগুলো করে।
♦ মেডিকেল ম্যানপাওয়ার: ডাক্তার ও নার্স বিদেশে কাজ করতে যাচ্ছে। বতমানে বাংলাদেশে বিদেশে গিয়ে কাজ করার মতো অসংখ্য ডিপ্লোমা নার্স ও গ্রাজুয়েট নার্স রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে কিছু মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট।
♦ ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানপাওয়ার: ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানপাওয়ার বিদেশে গিয়ে হাল্কা ও ভারী মেশিনারিজের কাজ করে থাকেন।
♦ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যানপাওয়ার: দক্ষ, অর্ধদক্ষ, এবং অদক্ষ শ্রমিকরা বিদেশে গিয়ে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কাজ করতে যাচ্ছেন। এ খাতে পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি প্রচুর নারী শ্রমিকও কাজ করতে যাচ্ছেন।
♦ রোড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার: বিদেশে  রোড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার হিসেবেও প্রচুর বাংলাদেশি কাজ করছে। রাস্তা তৈরি, মেরামত, সংরক্ষণসহ বিভিন্ন কাজ করছেন  এসব শ্রমিকেরা।

প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রায় দুই মিলিয়ন জনশক্তি শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে যার মধ্যে অর্ধেকেই দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশ একটি ঘনবসতি পূর্ণ  দেশ এবং আনুপাতিক হারে তাদের যথেষ্ট ভূমি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। বাংলাদেশ বিশ্বের প্রায় ২৮ টি দেশে শ্রমরপ্তানিকারক যার মধ্যে পেশাজীবী, দক্ষ, আধাদক্ষ, অদক্ষ শ্রমিক রয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশে বেশি পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে অবৈধ হুন্ডির বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইন সংশোধনসহ বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করায় প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে তাদের উপার্জিত অর্থ দেশে পাঠানোর কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। আর এ কারণেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একটা শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েছে।
অর্থনীতির পরিভাষায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হচ্ছে যে কোন দেশের অর্থনীতির জন্য একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূচক। কোন দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেশটির সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া যায়। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত হল তৈরি পোশাক ও নীটওয়্যার। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ ভাগের বেশি আসে এ খাত থেকে। কিন্তু এরপরও বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় একক খাত হল প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। কেননা পোশাক রপ্তানির অর্ধেকেরও বেশি ব্যয় হয় ব্যাক টু ব্যাক এলসি ও কাঁচামাল আমদানিতে। আর কারণেই বলা যায়, প্রবাসীরাই সচল রেখেছেন অর্থনীতির চাকা।
দেশে বেকার সমস্যা মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। প্রতিবছর কয়েক লাখ যুবকের প্রবাস যাত্রা কিছুটা হলেও বেকার সমস্যা নিরসনে অবদান রাখছে। তাছাড়া তাদের প্রেরিত অর্থ বেকার সমস্যা হ্রাস, দারিদ্র্য বিমোচন, পারিবারিক জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন সহ এলাকাভিত্তিক ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসাকে সচল রাখার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখে চলেছে।

No comments:

Post a Comment

Please Comment here

-->

Popular Posts

-->
-->