নারীর ক্ষমতায়নে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার ভূমিকা কি কি হতে পারে?
স্থানীয় সরকার হল সরকার ব্যবস্থার তৃণমূল পর্যায়। সামগ্রিক
জটিল প্রশাসনিক কর্মকান্ড শুধুমাত্র কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তৃণমূল পর্যায়ে
উন্নয়নমূলক ও প্রশাসনিক কর্মকান্ডের বাস্তবায়ন করার জন্য স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার কোন
বিকল্প নেই। বর্তমান সরকার ব্যবস্থায় তিনটি স্তরে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ।
বাংলাদেশের স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষুদ্রতম স্বায়ত্তশাসিত
প্রশাসনিক কাঠামো হল ইউনিয়ন পরিষদ। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন পরিষদে নারীর
উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। ১৩ জন প্রতিনিধি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত হয় যার মধ্যে
১ জন চেয়ারম্যান, ৯ জন সদস্য, ৩ জন মহিলা সদস্য। ইউনিয়ন পরিষদের কাঠামোতে পুরাতন প্রতিটি
ওয়ার্ডে ১ জন করে মোট ৩ জন নির্বাচিত মহিলা সদস্য রয়েছে।
১৯৯৭ সালে ইউনিয়ন পরিষদে মহিলাদের
জন্য সংরক্ষিত আসনের বিধান করা হয়। ১৯৯৭ সালে মহিলাগণ প্রথম ইউনিয়ন পরিষদে সংরক্ষিত
আসনে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়।
বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করতে পারে। সরকারের বিকেন্দ্রীকরণের
ফলে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ ভালভাবে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর জন্যই স্থানীয় সরকার
ব্যবস্থার উদ্ভব। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের নারীর ক্ষমতায়নে গৃহীত কার্যক্রম গুলো একমাত্র
স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমেই যথাযথভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব। এ জন্য স্থানীয় সরকার
ব্যবস্থার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
নারীর ক্ষমতায়নে স্থানীয় সরকারের প্রধান প্রধান ভূমিকা
সচেতনতা সৃষ্টি
নারীর ক্ষমতায়নের জন্য নারীদের সচেতন হতে হবে। নারীরা
যদি নিজেরাই নিজেদের অধিকার, দাবী – দাওয়া, দায়িত্ব, কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন না থাকে
তাহলে তাদের ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা তাদের সচেতনতা সৃষ্টিতে
নানারকম কর্মসূচি যেমন শিক্ষাব্যবস্থা, প্রশাসনিক দায়িত্ব প্রদান ইত্যাদি গ্রহণ করে
তাদের সচেতন করে তুলতে পারেন।
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ
শিক্ষা মানুষকে সচেতন করে তোলে। শিক্ষা
ছাড়া কোন জাতির উন্নতি হতে পারে না। শিক্ষাকে জাতির মেরুদন্ড বলা হয়। কোন জাতির উন্নয়নের
জন্য নারী পুরুষ সকলের শিক্ষাব্যবস্থা থাকাটা জরুরি। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা এক্ষেত্রে
খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এজন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়
এবং কলেজ সহ নানা রকম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা এবং প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করতে হবে।
প্রশিক্ষণ শিক্ষার সাথেই জড়িত। যে শিক্ষার ব্যবহারিক প্রয়োগে
বাস্তবের সাথে মিল না থাকে এবং তা যদি বাস্তবমুখী না হয় তাহলে সে শিক্ষা মূল্যহীন।
শিক্ষাগ্রহণ এবং সে শিক্ষাকে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণ মানুষকে
দক্ষ করে তোলে। নারীরা সাধারণত কম দক্ষ হয়ে থাকে। তাদের ক্ষমতায়নে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা
খুব জরুরি। স্থানীয় সরকার তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নানারকম প্রশিক্ষণ
কেন্দ্র ও ক্যাম্প গড়ে তুলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন
অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছাড়া নারীর ক্ষমতায়ন
সম্ভব নয়। নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন সর্বাগ্রে দরকার। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার খুবই গুরুত্ব
পূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কুটির শিল্প, হস্ত শিল্প প্রভৃতি গড়ে তুলে নারীদের উপার্জনের
সুযোগ তথা অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রদান করতে পারে।
নারীর দারিদ্র্য দূরীকরণ
দরিদ্র নারীর শ্রম শক্তির দক্ষতা
বৃদ্ধিকল্পে স্থানীয় সরকার তাদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং বিকল্প অর্থনৈতিক
ও সামাজিক সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের দারিদ্র্য দূর করে তাদের ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করতে পারে।
নারীর কর্মসংস্থান
স্থানীয় পর্যায়ে নারীর কর্মসংস্থান
সৃষ্টি করতে পারে স্থানীয় সরকার। স্থানীয় সরকার গ্রামীন অবকাঠামোয় বিভিন্ন কার্যক্রম
গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়নে সম্পৃক্ত করতে পারে।
এছাড়াও নারীর ক্ষমতায়নে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সময়োপযোগী
বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে এবং নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে
পারে।
No comments:
Post a Comment
Please Comment here