বাংলাদেশে নারীর অগ্রগতিতে পতিতাবৃত্তি একটি বড় সমস্যা
ক্ষুধা ও দারিদ্র্য পৃথিবীর প্রাচীনতম সামাজিক সমস্যা যা
কিনা বর্তমানে multi dimensional সমস্যা হিসেবে স্বীকৃত। কারণ দারিদ্যের করাল গ্রাসে
জর্জরিত মানব সমাজ জীবন জীবিকার তাগিদে নানবিধ অপরাধ বা বিচ্যুতিমূলক কাজ করতে বাধ্য
হয়। অথচ পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই বিচ্যুতিমূলক যে কোন কাজকে ঘৃণা করে। তাই আমাদের সমাজে
প্রচলিত পেশা গুলোর মধ্যে যে গুলো সমাজ স্বীকৃত নয় সেগুলো অমর্যাদা সম্পন্ন ও ঘৃণিত।
যৌনকর্ম এমনি একটি পেশা যা সুস্থ সামাজিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। Encyclopedia of Social Science এ যৌনকর্ম সম্পর্কে
বলা হয়েছে - আর্থিক বা অন্যান্য যে কোন সুযোগ সুবিধা আদায়ের জন্য অবৈধ যৌন সম্পর্ক
স্থাপনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করাকে পতিতাবৃত্তি বা অবৈধ যৌন পেশা বলে।
Dictionary of Social Work অনুযায়ী, সমাজে ঐ পেশাকে পতিতাবৃত্তি
বা অবৈধ যৌনকর্ম বলে যেখানে শুধু টাকা বা আর্থিক বিনিময়ে পরিচিত, অপরিচিত, দেশী – বিদেশী,
বর্ণগোত্র নির্বিশেষে যে কোন পুরুষের সাথে মহিলা যৌনকর্মে লিপ্ত হয়। এ যৌন ক্রিয়ায়
কোন ভাবাবেগ স্থান পায় না, শুধুমাত্র অর্থের বিনিময়ই প্রধান। কাজেই, যৌনকর্ম বা পতিতাবৃত্তিকে
নিম্নোক্তভাবে ব্যাখ্যা করা যায়:
প্রথমত, এটি শুধু অর্থের বিনিময়ে বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে
গঠিত ক্ষণস্থায়ী যৌন সম্পর্ক।
দ্বিতীয়ত, এ যৌন সংস্পর্শে কোন রকম ভাবাবেগ বা রোমান্টিকতার
স্থান নেই।
তৃতীয়ত, বৈবাহিক সম্পর্ক ছাড়া অর্থের বিনিময়ে যৌন চাহিদা
পূরণের এটি সহজ মাধ্যম।
চতুর্থত, পুরুষ তার যৌন ইচ্ছা চরিতার্থ করে আর মহিলা অর্থ
পায় – এ দুটিই এ সম্পর্কের মুখ্য ভিত্তি।
মহিলাদের পতিতাবৃত্তির কারণ
পতিতা শব্দটি যেহেতু স্ত্রীবাচক সেহেতু পতিতাবৃত্তি বলতে
সাধারণত মেয়েদেরকেই বোঝানো হয়েছে যারা এ ধরণের পেশায় নিয়োজিত থাকে। বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক
প্রতিকূলতা ও সহায়ক নিয়ামকের কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে পতিতাবৃত্তি ব্যাপকতা লাভ করেছে।
স্থান কাল পাত্র ভেদে এদের নামকরণেও ভিন্নতা এসেছে। যেমন: পতিতা, দেহ – প্রসারিণী,
কলগার্ল, প্রমোদবালা, গনিকা, বারবনিতা, কূলভী, যৌকর্মী ইত্যাদি। পতিতাবৃত্তির এ রকম
বিস্তৃতি ও ব্যাপকতার পেছনে বহুমুখী আর্থ-সামাজিক কারণ জড়িত রয়েছে।
অর্থনৈতিক সংকট ও দারিদ্র্য
বাংলাদেশের মোট পতিতাদের ৫৫ শতাংশই ক্ষুধা, দারিদ্র্য,
অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে এ পেশায় আসে। অন্যান্য যেসব কারণে মেয়েরা এ পেশায় নিয়োজিত সেগুলোর
সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য। দারিদ্র্যতার প্রভাবে ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ এবং
মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে অবস্থার শিকার হয়ে নিরীহ, সরলমনা দরিদ্র মেয়েরা এ পেশা
গ্রহণ করেছে। পতিতারা একবার অত্যাচারিত হয় গরিব বলে আর একবার অত্যাচারিত হয় নারী বলে।
সে অত্যাচারিত হয় পতিতা হিসেবে আখ্যায়িত হয়ে।
No comments:
Post a Comment
Please Comment here