আর্সেনিক দূষণ সমস্যা বাংলাদেশের একটি মারাত্মক সমস্যা
মাত্রাতিরিক্ত না হলে আর্সেনিক মানুষের শরীরের ক্ষতিসাধন
করতে পারে না, কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত হলেই তা ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে আসে এবং তা হচ্ছে নিশ্চিত
অসহনীয় যন্ত্রণা ও মৃ্ত্যু। বস্তুত এই অতিরিক্ত আর্সেনিক আমাদের চুল, নখ, লিভার, ফুসফুস,
কিডনী, হাড়, দাঁত ইত্যাদিতে জমা হতে থাকে এবং বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে থাকে। প্রাথমিকভাবে
এই ক্ষতিকর প্রভাব দৃশ্যমান না হলেও দুর্বল লোকদের মধ্যে তা ৩ – ৪ বছর ও সুস্থ সবল
লোকদের মধ্যে তা ৭ – ৮ বছরের মধ্যেই প্রকাশ পায়।
আর্সেনিক বিষক্রিয়ায় দু ধরণের লক্ষণ প্রকাশ পায়
১. ক্যারাটোসিস
২. মেলোনোসিস।
মেলোনোসিসে আক্রান্ত অবস্থায় রোগীর শরীরে চামড়া কালো বা
ধূসর হয়ে যায়। সাধারণত বুকে, হাটুতে, কব্জিতে এ লক্ষণগুলো বেশি প্রকাশ পায়। এ অবস্থায়
এদের কোন চুলকানি বা ব্যথা থাকে না।
তবে ক্যারাটোসিস অবস্থায় আক্রান্ত স্থান খসখসে,
শক্ত হয়ে যায় এবং হাতের তালু, পায়ের নখ ইত্যাদিতে ফুসকুড়ির ন্যায় ক্ষুদ্রাকৃতির গোটা
ও তাতে সাদা সাদা দাগ দেখা যায়। হাত পা ফুলে উঠে, বমি বমি ভাব থাকে ও ডায়রিয়া হতে পারে।
আর্সেনিকের চুড়ান্ত মাত্রায় রোগীর লিভার সিরোসিস, কিডনীর অসুখ, ঘা, হাত পায়ের নখ পড়ে
যাওয়া, গনোরিয়া, সিফিলিস ও গ্যাংগ্রিনের মত মারাত্মক ও জটিল রোগ হতে পারে।
বস্তুত এ এক ভয়াবহ ব্যাধি যা আরেক ভয়াবহ ব্যাধি এইডস এর
সাথেই শুধু তুলনীয়। এইডস এর মতই এ রোগের কোন চিকিৎসা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি, ফলে ভোগান্তি
ছাড়া এ থেকে নিষ্কিৃতির কোন উপায় নেই।
যেমন ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালের চিকিৎসক শিরতোষ
বাবু বলেন, এখনো আর্সেনিক বিষক্রিয়া আক্রান্ত রোগীর সুনির্দিষ্ট ওষুধ বা চিকিৎসা পদ্ধতি
আবিষ্কৃত হয়নি বলে আমাদের কাছে আসা এ ধরণের রোগীদের আর্সেনিক দূষিত পানি পান বন্ধ করার
পরামর্শ দেয়া হয়।
আর্সেনিক দূষণের কারণে সামাজিক সমস্যা ও বঞ্চনা
আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীরা এইডস এর মতই শারীরিক সমস্যা ছাড়াও
বিভিন্ন রকম সামাজিক সমস্যার শিকার হয়। অজ্ঞতা ও অশিক্ষার কারণে সাধারণ মানুষ এটিকে
পাপের ফসল বা ছোঁয়াছে মনে করে তাদেরকে একঘরে করে বা অযত্নে ফেলে রাখে। পরিবারের অন্য
সদস্যরা ভয়ে ভয়ে থাকে, মেলামেশা বন্ধ করে দেয়, এমনকি খাবার দেওয়াও বন্ধ করে দেয়। তরুণ
তরুণীরা বিয়ে সংক্রান্ত সমস্যায় ও বিবাহিতরা ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার সমস্যায় পতিত হয়।
No comments:
Post a Comment
Please Comment here